উহুদের যুদ্ধের পটভূমি
বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি মক্কার কুরাইশরা ভুলতে পারেনি। তারা বদরের প্রতিশোধ নিতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। এ সময় মক্কার কবিরা তাদের কবিতায় মদিনার বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। কুরাইশ নারীরা তাদের পুরুষদেরকে আরো একটি যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করতে থাকে। ফলে কুরাইশরা বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আরেকটি যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
যুদ্ধের ঘটনা
তৃতীয় হিজরি সালে মক্কার কাফির-মুশরিকরা উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩০০০ (তিন হাজার) সৈন্য নিয়ে মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। তারা মদিনার নিকটবর্তী উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে শিবির স্থাপন করে। কুরাইশদের মদিনা অভিযানের সংবাদ পেয়ে মহানবি (সা.) ১০০০ (এক হাজার) সৈন্যর একটি দল প্রস্তুত করেন। পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বিশ্বাসঘাতকতা করে ৩০০ সৈন্যসহ সরে দাঁড়ায়। ফলে মহানবি (সা.) মাত্র ৭০০জন সৈন্য নিয়ে কুরাইশদের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হন। ২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে উভয় দল সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যুদ্ধের শুরুতে মুসলিম সৈন্যদের আক্রমণে কুরাইশরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় গিরিপথে পাহারারত মুসলিম সৈন্যদল এটিকে চূড়ান্ত বিজয় মনে করে গনিমতের মাল কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সুযোগে কুরাইশদের অশ্বারোহী দল পেছন থেকে আক্রমণ করে মুসলিম সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
যুদ্ধের ফলাফল
উহুদ যুদ্ধে ৭০জন মুসলিম বীর শাহাদাত বরণ করেন। আর মাত্র ২৩ জন কাফির মৃত্যুবরণ করে। নেতার আদেশ অমান্য করা এবং শৃঙ্খলাবোধের অভাবে এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয় হয়। এছাড়া তৎকালীন মুশরিক নেতা খালিদ বিন ওয়ালিদের রণকৌশল মুসলমানদের বিপর্যয়ে ভূমিকা রেখেছিল।
যুদ্ধের গুরুত্ব
এ যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের ধৈর্য ও ইমানের অগ্নিপরীক্ষা। সাময়িক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে মুসলমানগণ ধৈর্য ও ইমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সাময়িকভাবে বিজয়ী হয়েও কুরাইশরা মুসলমানদের পশ্চাদ্ধাবন করতে সাহস করেনি। কোনো মুসলিমকে বন্দিও করতে পারেনি। অপরদিকে মহানবি (সা.) মুসলিম সৈন্যদের একটি দলকে কাফিরদের পশ্চাদ্ভাবনে প্রেরণ করেন। এতে মুসলমানদের সাহস ও মনোবল আরো বৃদ্ধি পায়। তাঁদের সাময়িক বিপর্যয় ভবিষ্যৎ বিজয়ের পথকে উন্মোচিত করে। নেতার আদেশ অমান্য করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাঁরা সম্যকভাবে অবহিত হন। পরবর্তীকালে আর কোনো যুদ্ধে তাঁরা এ ভুল করেননি।
Read more